প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর পৌরোহিত্যে অর্থনীতি বিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা মহাসাগর সম্পদের সঠিক ব্যবহারের জন্য গভীর সমুদ্র প্রযুক্তির উন্নয়ন ও গভীর সমুদ্র সম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের ‘গভীর মহাসাগর মিশন’ বিষয়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে।
এই মিশনে আনুমানিক ব্যয় হবে ৪ হাজার ৭৭ কোটি টাকা। ৫ বছরের জন্য পর্যায় ভিত্তিক এই মিশন কার্যকর করা হবে। প্রথম পর্যায়ে ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৩ বছরের জন্য খরচ ধরা হয়েছে ২৮২৩.৪ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় সরকার ব্লু ইকোনমি বা সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য যে মিশন মোড প্রকল্প গ্রহণ করেছে, তারই অন্যতম অঙ্গ হল ‘গভীর সমুদ্র মিশন’। ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক এই মিশনে বাস্তবায়ণকারী নোডাল মন্ত্রক হিসেবে কাজ করবে।
মূলত ছটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করে এই গভীর মহাসাগর মিশন গড়ে তোলা হয়েছে। সেগুলি হল –
১. গভীর সমুদ্র ক্ষেত্রে খনিজ ও নিমজ্জিত পদার্থ উত্তোলনের জন্য প্রযুক্তির উন্নয়ন : বৈজ্ঞানিক সেনসর এবং সরঞ্জামকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্রের ৬ হাজার মিটার গভীরতায় নিমজ্জিত খনিজ সম্পদের অনুসন্ধান চালানো হবে। খুব দেশই এই ক্ষমতা অর্জন করেছে। এর ফলে, খনিজ সম্পদের অনুসন্ধানের পথ সুগম হবে এবং সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে।
২. মহাসাগরীয় জলবায়ু পরিবর্তন পরিষেবার বিকাশ : এর মাধ্যমে কয়েক দশকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান চালানো হবে এবং ভবিষ্যতের পূর্বাভাস তৈরি করা হবে। এতে উপকূলীয় পর্যটনের বিকাশের পাশাপাশি সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশসাধন হবে।
৩. গভীর সমুদ্রে জীব বৈচিত্র অনুসন্ধান ও সংরক্ষণের জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন : গভীর সমুদ্রে জীব বৈচিত্রের ওপর গবেষণা চালানোর পাশাপাশি উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের অবস্থানের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হবে। এতে সামুদ্রিক মৎস্য শিকার এবং সেই সম্পর্কিত পরিষেবাগুলির বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির উন্নতিসাধন ঘটবে।
৪. গভীর মহাসাগর পর্যবেক্ষণ এবং অন্বেষণ : এর প্রাথমিক লক্ষ্য হল ভারত মহাসাগরের মধ্য-মহাসাগরীয় প্রান্তে বহু ধাতব হাইড্রোথার্মাল সালফাইড খনিজের সম্ভাব্য স্থানগুলি অনুসন্ধান ও শনাক্ত করা। এতে সমুদ্রিক সম্পদের অনুসন্ধান সম্ভবপর হবে এবং সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে।
৫. মহাসাগর থেকে বিদ্যুৎ এবং মিষ্টি জলের উৎপাদন : তাপ শক্তিতে রূপান্তর করে সমুদ্রের জল থেকে কিভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়, সেবিষয়ে গবেষণা এবং বিশদ ইঞ্জিনিয়ারিং পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর ফলেও সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে।
৬. মহাসাগরীয় জীব বিজ্ঞানের জন্য উন্নত উপকূলীয় কেন্দ্র : এর মূল লক্ষ্যই হল মানব সম্পদকে কাজে লাগানো এবং মহাসাগরীয় জীব বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং ক্ষেত্রে বিকাশসাধন করা। এর ফলে সামুদ্রিক জীব বিজ্ঞান, সমুদ্র ভিত্তিক বাণিজ্য এবং অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে।
গভীর সমুদ্রে খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলির কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে। কারণ, এটি বাণিজ্যিক ভাবে সহজে পাওয়া যায় না। সুতরাং শীর্ষ স্থানীয় প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি শিল্পের সঙ্গে সহযোগিতায় এই প্রযুক্তির বিকাশসাধন করা হবে। গভীর সমুদ্র অঞ্চলে অনুসন্ধানের জন্য একটি গবেষণা জাহাজের প্রয়োজন। এই জাহাজ ভারতীয় শিপইয়ার্ডে তৈরি করা হবে। এর ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও জাহাজের নকশা, বিশেষ সরঞ্জাম সহ প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোগত ক্ষেত্রে সাহায্যের জন্য অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ এবং স্টার্ট আপ সংস্থাগুলিকে যুক্ত করা হবে।
পৃথিবীর ৭০ শতাংশ জুড়ে রয়েছে মহাসাগর। আমাদের জীবনের এ এক অমূল্য সম্পদ। গভীর মহাসাগরে প্রায় ৯৫ শতাংশই অজানা রয়েছে। ভারতের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩০ শতাংশ সমুদ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। তাদের প্রধান জীবিকাই হল মৎস্য চাষ এবং পর্যটন। এগুলি হল সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির মূল কাণ্ডারী। একই সঙ্গে মহাসাগর হল খাদ্য, শক্তি, খনিজ পদার্থ, ওষুধ, আবহাওয়া এবং জলবায়ু সংক্রান্ত বিষয়ের স্টোর হাউস। রাষ্ট্রসংঘ ২০২১ থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত এই এক দশককে ‘সুস্থায়ী উন্নয়নের জন্য মহাসাগর বিজ্ঞানের দশক’ বলে অভিহিত করেছে। এক অনন্য সামুদ্রিক অবস্থানে রয়েছে ভারত। ৭ হাজার ৫১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূল রেখা, ৯টি উপকূলীয় রাজ্য এবং ১ হাজার ৩৮২ কিলোমিটার দীর্ঘ দ্বীপপুঞ্জ রয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন ভারত গঠনের লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় সরকার ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে সমুদ্র ভিত্তিক অর্থনীতির বিকাশে উদ্যোগ নেয়।